ঢাকা বদলাবে উড়াল সড়কে
নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্তমান সরকারের চলমান ও পরিকল্পনাধীন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ঢাকা হবে যানজটমুক্ত নগরী। যা এখন স্বপ্ন, তা সত্যি হবে অচিরেই। এখনকার মতো আর যানজটে নাকাল হতে হবে না। উড়াল সড়কে বদলে যাবে রাজধানীর চেহারা। মানুষ স্বস্তিতে চলাচল করতে পারবে যখন যেখানে খুশি। দূর-দূরান্ত থেকে রাজধানীতে এসে অফিস করে আবার ফিরে যেতে পারবে কাঙ্ক্ষিত সময়ে। এমনই আশাবাদী অভিমত সংশ্লিষ্টদের। তবে এমন স্বপ্ন আর আশাবাদের মধ্যে কিছুটা ফাটলের রেখাপাতও আছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের অনেকে জানিয়েছেন, ফ্লাইওভার নাম দেয়া হলেও বাস্তবে কোনোটিই প্রকৃত ফ্লাইওভারের রূপ পায়নি। অনেকটা ওভার পাসের আদলে হয়ে গেছে। এতে করে ফ্লাইওভার চালু হলে রাজধানীর যানজট কিছুটা কমলেও কার্যত দীর্ঘ মেয়াদে তেমন কোনো লাভ হবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ফ্লাইওভারের নামে রাজধানীতে যেভাবে ওভারপাস তৈরি করা হচ্ছে, তাতে এসব ওভারপাস রাজধানীর যানজট নিরসনের ক্ষেত্রে কোনো সুফল বয়ে আনবে না। একটি ফ্লাইওভারের সঙ্গে অন্য ফ্লাইওভারের এক ধরনের সংযোগ রাখা দরকার হলেও তা করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, একটি নগরীর ফ্লাইওভার তৈরি বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়। এই কাজগুলো অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে করতে হবে। আর এই কাজগুলো একটি সংস্থার অধীনে পরিকল্পিতভাবে করা উচিত। কিন্তু সেটা না করে একেক সংস্থা একেকভাবে ফ্লাইওভার তৈরিতে কাজ করে চলেছেন। এসব কারণে নগরবাসী চরম ভোগান্তিরও শিকার হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, সমতলের সড়কের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফ্লাইওভার তৈরি করার দরকার হলেও সেসব নীতিমালা মানছে না ফ্লাইওভার নির্মাতা সংস্থাগুলো। এ ব্যাপারে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, যানজট নিরসনে সরকারের ফ্লাইওভার প্রকল্প অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। রাজধানীকে বাসযোগ্য করতে প্রয়োজনের আলোকে আরও ফ্লাইওভার করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. আবদুল মালেক বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার চালু হলে রাজধানীবাসীর অনেক উপকারে আসবে এ প্রকল্পটি। সরকার চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ ধরনের আরও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যানজট নিরসনে কাজ করার অঙ্গীকার করেছি। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কার্যক্রমও শুরু করেছি। টঙ্গী থেকে মগবাজার পর্যন্ত সড়কের সিগন্যাল উঠিয়ে দিয়ে সেসব জায়গায় ইউলুপ (উড়াল সড়ক) নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’ নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ফ্লাইওভার রাজধানীর যানজট নিরসনে আংশিক ভূমিকা পালন করছে। রাজধানী শহরকে কার্যকর যানজটমুক্ত করতে হলে গণপরিবহন ব্যবস্থাসহ আরও অনেক কাজ করতে হবে। আর যেসব ফ্লাইওভার গড়ে তোলা হচ্ছে, তা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আলোকে করতে হবে। জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর রাজধানীকে ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তিনি। উড়াল সড়ক এর মধ্যে অন্যতম। ইতিমধ্যে এ খাতের বেশ সাফল্য দৃশ্যত হয়েছে। বাকি কাজগুলো সম্পন্ন হলে সত্যি সত্যিই ঢাকা হবে বাসযোগ্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে নির্মিত হয়েছে কুড়িল-পূর্বাচল ফ্লাইওভার, মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোড ফ্লাইওভার (জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার), যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার (মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার), বনানী ওভারপাস। এছাড়া মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু করে, যা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্বিতীয় মেয়াদে এসে শান্তিনগর-ঝিলমিল পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণের লক্ষ্যে চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছে। আমিন বাজার থেকে আজিমপুর পর্যন্ত পিপিপিভিত্তিক (প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ) ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মহাখালী উড়াল সেতু থেকে কাকলী পর্যন্ত চারটি ইউলুপ নির্মাণে একটি প্রকল্পও গ্রহণ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) টঙ্গী থেকে মগবাজার পর্যন্ত সড়কের সব রোডক্রসিং উঠিয়ে সেখানে ওভারপাস তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করেছে। শিগগিরই এসব ইউলুপ তৈরির কার্যক্রম শুরু হবে। এদিকে রোববার ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) বৈঠকে আরামবাগ থেকে বাবুবাজার সেতুর কেরানীগঞ্জ অংশ পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর খিলগাঁও ও মহাখালী ফ্লাইওভার মহানগরীর যানজট নিরসনে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি